Posts

Showing posts from 2020

টিকটক,গণমাধ্যম এবং জনপরিমন্ডল

Image
পৃথিবীতে মিডিয়া বা মাধ্যমের ধরনের অভাব নেই। এডভারটাইজিং মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, নিউ মিডিয়া, ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া, হাইপার মিডিয়া ইত্যাদি। এগুলো সব ঘেটে ঘেটে সংজ্ঞায়ন দেওয়া যদিও আমার মুখ্য কাজ নয় আপাতত। আমার কাজটা হলো এইটা বলে ঘটনাকে একটু বিস্তৃত করা যে, এরা প্রত্যেকে একেকটি ‘স্ট্রাকচার’ বা গঠন। যেমন ধরুন প্রিন্ট মিডিয়া নিয়েই কথা বলা যাক। কাগজ বা ক্যানভাসের সাহায্যে যোগাযোগের প্রক্রিয়াই হলো প্রিন্ট মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো প্রধানত পেপার আর ম্যাগাজিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রিন্ট মিডিয়ার চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল জনগণের মধ্যে। আবার দেখুন ১৯৯০ এর পর থেকে টেকনোলজি ও ইন্টারনেটের বুম, ২০০১-২০০৩ সালে ইন্টারনেট ভিত্তিক কর্পোরেশন ও অনলাইন সেবা উত্থানের ফলে প্রিন্ট মিডিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আসলো ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া। এই নতুন মিডিয়ার উত্থানের ফলে মানুষের গতিবিধি, পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ম- শৃঙ্খলে নতুনত্বের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, পৃথিবীতে প্রতিবারই যতো ধরনের মিডিয়ার ক্লাসিফিকেশনের জন্ম হয়েছে, এরা প্রত্যেকে স্ব স্ব “স্ট্রাকচার বা গঠন”। প্রতি ক্লাসিফ...

পশ্চিমের নিহিলিজমঃ- করোনার ভুবনে নতুন চেতনা

Image
“ In Order to political Change” হলো রাশিয়ার ১৮৮১ সালের দিকে নিহিলিজম (Nihilism) এর গুরুত্বপূর্ণ মুভমেন্টের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষার মধ্যে দুটো চেতনাগত বিষয় লুকিয়ে আছে। একটি হলো, সকল ধরনের মতবাদের প্রত্যাখ্যান যা একনায়কতান্ত্রিকতাকে অগ্রসর করাতে সহায়তা করে এবং দ্বিতীয়টি হলো সর্বসাধারণের উপর যে সকল আইন বা বিধান অপ্রনিধানযোগ্য এবং সাংবিধানিক নয় তাকে ছিন্ন করে দেওয়ার মাধ্যমে মুক্ত করা। এর অর্থ হলো, নতুন করে “Humanism” এর আইডিয়াকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খুঁজে বের করা। ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে এই নিহিলিজমের প্রয়োগ পশ্চিমারাই করে যাচ্ছে কিন্তু চেতনাগত ধারণা নতুন করে   “Humanism” এর আইডিয়াকে খোঁজার মাধ্যমে নয় বরং ধ্বংসের মাধ্যমে। আমেরিকা নতুন করে এই মহামারী রোগের থেকে উত্তরণের জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছেন তা হলো চীনকে নতুন করে রেসিজমের ফর্মে সাজানো, হংকং কে চীনের নয়া মেডিকেল ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে উস্কানী দেওয়া এবং সমরাস্ত্রকে নতুন ফর্মে সাজানো। এর জন্য পশ্চিমা ফ্রান্স,জার্মানী এবং আমেরিকা যে শব্দটি ব্যবহার করছে তা হলো “weaponize the coronavirus” . আমেরিকার ন্যারেটিভ বিশেষ...

সামির আমিনের সাথে উপনিবেশিক রাজনীতির পাঠঃ- আন্তর্জাতিকতাবাদ।

Image
বিশ্বায়ন কোনো নতুন বিষয় নয়। বরং এটি হচ্ছে পুঁজিবাদী ধারণার পুরোনো একটি মতবাদ।ভারতবাসীরা এর আচরণ ভালোকরেই জানবেন । ১৮ থেকে ২০ শতাব্দী পর্যন্ত ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে এবং যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেটাই ছিল তাদের বিশ্বায়ন। শোষিত গোষ্ঠী শুধুমাত্র বৈশ্বিক পুঁজিবাদী সিস্টেমের মধ্যে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে। উপনিবেশবাদ হলো তাই বিশ্বায়নে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার একটি প্রধান হাতিয়ার। ভারতবাসীদের মধ্যে যারা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলন করেছিল সেগুলো সমাজতান্ত্রিক বৈপ্লবিক লিডারশিপের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং মহাত্না গান্ধী কিংবা নেহেরুর পদক্ষেপগুলো ছিল জাতীয়ভাবে জনপ্রিয়তম আন্দোলন। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা এসে দুইটি মূলধারার উপর ভিত্তি করে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো ,উপনিবেশবাদের ক্রিমিনাল এক্টের ফলাফল। যার কারণে সমগ্র ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। এবং দ্বিতীয়ত, ভারতের স্বাধীনতার পেছনে একদল ভারতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর হাত রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম কংগ্রেস দল ,তাদের ছায়াতলে ছিল একদল শ্রমশ্রেণীর দল। কংগ্রে...

ফরাসী দার্শনিক বাদিউ এর ছোট একটা ইন্টারভিউ এবং অনেক কিছু পাওয়া।

Image
[ Alain Badiou is a French philosopher, formerly chair of Philosophy at the École normale supérieure and founder of the faculty of Philosophy of the Université de Paris VIII with Gilles Deleuze, Michel Foucault and Jean-François Lyotard. ] থমাসঃ- সান্স পাপাইদের ঘটনা সম্ভবত আপনার সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনায় সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত উদাহরণ। তাদের সংগ্রাম বর্তমান সময়কালে রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেন আপনার কাজের মধ্যে সান্স পাপাইদের গুরুত্ব এতোটা ফুটে উঠেছে এবং সেই সাথে সমসাময়িক রাজনীতিতেও ? বাদিউঃ- দেখুন, আমার অবস্থান এখনও ক্লাসিক্যালঃ মার্ক্সীয় বিবেচনায় প্রলেতারিয়েত শ্রেণী গুরুত্ব পেয়েছে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এবং যারা এখনও একত্রিত হতে পারেনি বড় শহরগুলোতে তাদের শ্রমমূল্য নির্ধারণী বিদ্রোহের জন্যে যেখানে বিদ্রোহ একটি কঠিন আকারে দাঁড়াতে পারেনি । আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এই প্রলেতারিয়াত শ্রেণী কিন্তু অভিবাসী শ্রেণী (যারা গ্রাম থেকে শহরের দিকে এসেছে) এবং একই সাথে এরা অনিবন্ধিত শ্রেণী (সান্স পাপাইয়া)।শহরে বসবাসের অধিকারের জন্যে “শ্রমিকের পুস্তিকা” নামক একট...

"Biopolitics" বিষয়টা কি আর কেমন?

Image
বায়োপলিটিক্সের 'বায়ো' শব্দটা দিয়ে জৈবিক ধারণাকে সরাসরি নির্দেশ করে না। অনেকের মধ্যে বায়োলজিক্যাল ধারণা চলে আসে যখনই বায়োপলিটিক্সের কথা বলা হয়। মূলত এখানে বায়োপলিটিক্সের 'বায়ো' শব্দটা দ্বারা 'জৈবিক' ধারণাকে কিছুটা সংকোচিত করে রাজনৈতিক ধারণার জন্ম দেয়। জীবন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক প্রতিচ্ছবি রাজনীতির সাথে মিলিত হওয়ার পরে বায়োপলিটিক্সের উদ্ভব হয়েছিল। বায়োপলিটিক্স অর্থ এমন সরকার যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একটি নিয়মতান্ত্রিক গণনা হিসাবে মানুষের জীবনকে বিবেচনা করে,কাজে লাগায়, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে। বায়োপলিটিক্যাল যুগের শুরু হবার আগে, মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক যুগে শাসকরা এই প্রক্রিয়ায় রাজনীতির কল্পনাও করেননি। রাজতন্ত্রের যুগে বাদশাহরা কেবলমাত্র ব্যতিক্রমী কর আদায় করতেন এবং জরিপ চালিয়েছিলেন, মাঝে মাঝে জণসাধারণকে তাদের পক্ষে লড়াই করার জন্য ডেকেছিলেন, এবং যখন তারা(জণসাধারণ) অসন্তুষ্ট হন তখন মাঝে মাঝে তাদের হত্যা করে। জণসাধারণের অসন্তুষ্টতা রাজা বাদশাহ এর মধ্যে ভয়ের জন্ম দিতো বলে খতম করে ফেলতেন। এই জাতীয় নিয়মের কোনও বিজ্ঞান ছিল না, কেবল নিষ...

মিশেল ফুকোঃ জ্ঞান,শৃঙ্খলা এবং ক্ষমতা

Image
মিশেল ফুকোঃ জ্ঞান,শৃঙ্খলা এবং ক্ষমতা বর্তমানে পাশ্চাত্য সমাজে সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে মিশেল ফুকো যেন এক শক্তিশালী ভাবাদর্শের নাম। মিশেল ফুকোকে পাঠ করা এবং সেই সাথে বিবেচনা করার অর্থ হলো নতুন করে সমাজ,ক্ষমতা,জ্ঞান ও ইতিহাসকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পাঠ করা। ফুকোর রচনা নির্ভরশীল হয়ে উঠে রাজনীতি-অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে। ফুকোর সময়কালে আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জাঁক দেরিদা ছিলেন তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দী, ফুকো ষাটের দশকে স্ট্রাকচারালিস্ট আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন,যদিও পরবর্তী সময়কালে তিনি সেই গোষ্ঠীর আর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আমার বর্তমানের লেখাটি মূলত ফুকোর সামগ্রিক ভাবাদর্শগত জায়গাকে উন্মোচন করার প্রক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সেই আলোচনা নিম্নে ব্যক্ত হলো  বিংশ শতাব্দীর ফরাসি দর্শনশাস্ত্রে মিশেল ফুকো সর্বাপেক্ষা আলোচিত,আলোড়ন জাগানো এক চিন্তাশীল ব্যক্তি।উত্তর আধুনিক চিন্তাধারা,সাহিত্যতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক প্রগতির ধারক বাহক হিসেবে ফুকো অধিক পরিচিত। জ্য পল সাত্রে,আলবেয়ার কামু,জাঁক দেরিদা ও জাঁক লাকা এর সাথে তার ভাবনাচিন্তা ও লেখাপত্র ফরাসি পন্ডিত মহলকে নাড়ি...