"Biopolitics" বিষয়টা কি আর কেমন?
বায়োপলিটিক্সের 'বায়ো' শব্দটা দিয়ে জৈবিক ধারণাকে সরাসরি নির্দেশ করে না। অনেকের মধ্যে বায়োলজিক্যাল ধারণা চলে আসে যখনই বায়োপলিটিক্সের কথা বলা হয়। মূলত এখানে বায়োপলিটিক্সের 'বায়ো' শব্দটা দ্বারা 'জৈবিক' ধারণাকে কিছুটা সংকোচিত করে রাজনৈতিক ধারণার জন্ম দেয়।
জীবন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক প্রতিচ্ছবি রাজনীতির সাথে মিলিত হওয়ার পরে বায়োপলিটিক্সের উদ্ভব হয়েছিল। বায়োপলিটিক্স অর্থ এমন সরকার যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে একটি নিয়মতান্ত্রিক গণনা হিসাবে মানুষের জীবনকে বিবেচনা করে,কাজে লাগায়, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে।
বায়োপলিটিক্যাল যুগের শুরু হবার আগে, মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক যুগে শাসকরা এই প্রক্রিয়ায় রাজনীতির কল্পনাও করেননি। রাজতন্ত্রের যুগে বাদশাহরা কেবলমাত্র ব্যতিক্রমী কর আদায় করতেন এবং জরিপ চালিয়েছিলেন, মাঝে মাঝে জণসাধারণকে তাদের পক্ষে লড়াই করার জন্য ডেকেছিলেন, এবং যখন তারা(জণসাধারণ) অসন্তুষ্ট হন তখন মাঝে মাঝে তাদের হত্যা করে। জণসাধারণের অসন্তুষ্টতা রাজা বাদশাহ এর মধ্যে ভয়ের জন্ম দিতো বলে খতম করে ফেলতেন। এই জাতীয় নিয়মের কোনও বিজ্ঞান ছিল না, কেবল নিষ্ঠুর কৌশল দ্বারা শাসিত হতো।
আজকের বিশ্বে ‘উন্নত’ দেশগুলির সরকারগুলি কম-বেশি সবাইকে নজরদারি করে, অবশ্যই তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। জাতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক ও সামরিক অবক্ষয়জনিত রোগ এড়াতে পারে এমন রোগ প্রতিরোধের প্রয়াসে এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছিল। কার্যকরভাবে রোগের সাথে মোকাবিলা করার জন্য এমন একটি পদ্ধতির প্রয়োজন যা পুরো জনসংখ্যাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গ্রহণ করে,নিয়ন্ত্রণ করে এবং হেজেমনি সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটো-অর্থনীতিবিদরা একটি দেশে এর সমগ্র সম্পদের সাথে জণসংখ্যার সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছিলেন, সরকারী হস্তক্ষেপকে রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে জনসংখ্যার আকার নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সরকারের উদ্যোগ তখন হয়ে উঠলো "জণগণের সংবিধান" কে নতুনভাবে সাজাবার, সকল জণসাধারণের "Well being" হয়ে উঠলো কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
বায়োপলিটিক্স হল একধরনের শক্তি/ক্ষমতা যা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জীবনের যত্ন ও বর্ধিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ করে।বায়োপলিটিক্যাল সমাজগুলিতে, আমাদের স্বাস্থ্য নিখুঁত দাতব্য/দানশীল/দয়াশীল উদ্বেগের বিষয় হিসাবে দেখা যায় না, (যদিও এটি গল্পের অংশ) তবে রাষ্ট্র এবং ধনী ব্যক্তিদের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্যই বায়োপলিটিক্সের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়, কারণ জণসাধারণের মাত্রার উপর নির্ভর করে ধনী/রাষ্ট্র ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে কি পারছে না। এই পলিটিক্সকে তাই বলা যায় "In order to Enhance the power of the state and wealthy"
এই প্রক্রিয়াটির অন্ধকার দিক রয়েছে। সুসংহত জনসংখ্যা তৈরি করে বায়োপলিটিক্স অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের যুগে যাত্রা শুরু করে, যেখানে পুরো জনগোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবনযাত্রার মানকে উর্ধ্বগামী করে তোলার জন্যে। যাকে আপাত দৃষ্টিতে "সুসংহত" বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা জটিল বিভেদকে পুজি করে রাজনীতি করে উপরের কাঠামোর ব্যক্তিবর্গরা। বলতে পারেন এটা অনেকটা "antagonistic struggle between different social forces" কে প্রমোট করে। বলতে পারেন, রাষ্ট্র বা কর্পোরেশন অনেকাংশে সাধারণ কোনো এক জণগণের মৃত্যুকে ন্যায্যতা প্রদান করে অন্যান্যদের বেচে থাকার স্বার্থে (সহজ হিসেবে আমি সমাজের যদি উচু স্তরের পুজিপুতি হই তবে আপনি অ-পুজিপতি বলে আপনি সমাজে কোনো ক্রেডিট বহন করেন না, যার ফলে আপনার মূল্য শূণ্যের কোটায়)। এই মধ্যস্ততা রাষ্ট্র বা কর্পোরেশন জণসাধারণের সাথে করে থাকে। এর ফলে রাষ্ট্র "State Racism" করে বসে। রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদী আচরণের ফলে নিম্নশ্রেণীর কাঠামোর অনেক মানুষ তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন না।
বায়োপলিটিক্স অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলি পরিবেশন করতে এবং স্বার্থ রক্ষার্থে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এটি সিস্টেমের অর্থনৈতিক প্রয়োজনগুলি সরবরাহ করে এবং অর্থনীতিকে সমর্থন করে নিজেকে অব্যাহত রাখে। বায়োপলিটিক্স অনেক সময় হয়ে উঠে সাম্রাজ্যবাদের চিহ্ন আকারে, যাকে বলতে পারেন Biopolitical Imperialism.এটি হলো একধরণের শক্তি যা তার ক্ষতিগ্রস্থদের জীবন নিয়ে কোনভাবেই চিন্তা করে না। এই সাম্রাজ্যবাদ মূলত বর্ণবাদী ধারণাকে পোষণ করে থাকে। এর মাধ্যমে প্রথম বিশ্বের দেশের অন্তর্ভুক্ত এক শ্রেণীর নাগরিককে সাধারণ "মানবতাবাদ" এর ধারণা থেকে দূরে সরিয়ে এনে স্বার্থের রাজনীতিতে মত্ত করে তোলে। একটা সহজ হিসেব, আমেরিকা গত কয়েক দশক ৫০% এর বেশি অর্থ ব্যয় করে শুধুমাত্র সামরিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করার জন্য। যুদ্ধ বিগ্রহ সৃষ্টি করে আমেরিকান সাম্রাজ্যের ধারণাকে পাকাপোক্ত করে তোলে এবং পুরো বিশ্বকে ভাগ করে নিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থের মতো করে সাজিয়ে তুলছে। তাদের কাছে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ এর উপর নির্ভর করে গঠিত হয় অন্যদের ভালো মন্দ।
উদাহরণস্বরূপ বর্তমান আন্তর্জাতিক মাইগ্রেশন শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে, যার দ্বারা দরিদ্র দেশগুলির মোটামুটি ধনী এবং সুদক্ষ লোকেরা, বিশেষত চিকিৎসা কর্মীরা ধনী জনগোষ্ঠীর দিকে আকৃষ্ট হয়। ধনীদের স্বার্থের বিনিময়ে দরিদ্র দেশগুলি নিজেদের আর্থ সামাজিক কাঠামোকে সাজিয়ে তুলে। মৃত্যুর একটি রফতানি শিল্পও রয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে, যার মধ্যে দরিদ্র দেশগুলিতে লোকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি করা হয় এবং ব্যবহার করা হয়, কেবল তাদের হত্যাই করা নয়, সামাজিক বীমা ব্যবস্থা সংবিধানের ভিত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়, উন্নয়নকে বাধা দেয়া হয় যেন গোলাম হয়ে টিকে থাকতে পারে।
ধনী দেশগুলি দরিদ্র দেশগুলিকে 'সাহায্য' এর মাধ্যমে বিকাশে সহায়তা করার দাবি করছে, তবে আমি যুক্তি দেব যে এটিও দরিদ্র দেশগুলিতে জাতীয় স্বনির্ভরতার বিকাশের প্রতি ঝুঁকির ঝোঁক রাখে, এই স্বনির্ভরতার জন্ম দেয় সাম্রাজ্যবাদী ধারণা দিকে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিংবা চীনের দক্ষিণ এশিয়ার ফান্ডের দিকেই লক্ষ্য করুন, তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য সরাসরি নির্ভরশীল তাদের সাজানো স্বার্থের মাধ্যমে, ফলে সাধারণ জণগণ হিসেবে আমরা কি ভোগ করছি, তা কতোটুকু ক্ষতিকর আমাদের জন্যে সেই হিসেব নিকাশে আমরা যেতে পারছি না। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সামরিক প্রভাব ও যুদ্ধে কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি হচ্ছে না তা পশ্চিমার কাছে "Matter of Concerns" নয়, বরং তা সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে কতোটুকু ভূমিকা পালন করছে তা দেখার বিষয়।
তৃতীয় বিশ্ব এবং প্রথম বিশ্বের মধ্যে বৈপরীত্যের সৃষ্টি করা হয় এভাবেই, যার মাধ্যমে মৃত্যুকে প্রতীকীভাবে রফতানি করা হয় এবং জীবনকে আমদানি করা হয়। যেই জীবনের মূল্য মূলত প্রথম বিশ্বের টিকে থাকার ইতিহাসকে রচনা করে। বায়োপলিটিক্স এভাবে পদ্ধতিগতভাবে অবক্ষয় ঘটায়।
Comments
Post a Comment