ফরাসী দার্শনিক বাদিউ এর ছোট একটা ইন্টারভিউ এবং অনেক কিছু পাওয়া।
[Alain Badiou is a French philosopher, formerly chair of Philosophy at the École normale supérieure and founder of the faculty of Philosophy of the Université de Paris VIII with Gilles Deleuze, Michel Foucault and Jean-François Lyotard.]
থমাসঃ- সান্স পাপাইদের ঘটনা সম্ভবত আপনার সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনায় সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত উদাহরণ। তাদের সংগ্রাম বর্তমান সময়কালে রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেন আপনার কাজের মধ্যে সান্স পাপাইদের গুরুত্ব এতোটা ফুটে উঠেছে এবং সেই সাথে সমসাময়িক রাজনীতিতেও ?
বাদিউঃ- দেখুন, আমার অবস্থান এখনও ক্লাসিক্যালঃ মার্ক্সীয় বিবেচনায় প্রলেতারিয়েত শ্রেণী গুরুত্ব পেয়েছে যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এবং যারা এখনও একত্রিত হতে পারেনি বড় শহরগুলোতে তাদের শ্রমমূল্য নির্ধারণী বিদ্রোহের জন্যে যেখানে বিদ্রোহ একটি কঠিন আকারে দাঁড়াতে পারেনি । আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, এই প্রলেতারিয়াত শ্রেণী কিন্তু অভিবাসী শ্রেণী (যারা গ্রাম থেকে শহরের দিকে এসেছে) এবং একই সাথে এরা অনিবন্ধিত শ্রেণী (সান্স পাপাইয়া)।শহরে বসবাসের অধিকারের জন্যে “শ্রমিকের পুস্তিকা” নামক একটি নথিতে তাদের নাম শ্রেফ উল্লেখ ছিল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পুলিশি ভয়াবহতাকে বৃদ্ধি করলো, মানুষের মধ্যে স্থায়ী সন্দেহ ঢুকানো শুরু করলো শুধুমাত্র যেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ কেন্দ্রমুখী হয়, একই কাজ করা হয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার সাথে। এভাবে সেই শোষিত শ্রেণীটি আন্তর্জাতিক খেতাব পেয়েছে সর্বহারা শ্রেণী হিসেবে এবং রাষ্ট্রটি সর্বহারার সৃষ্টিসাধনকারী। সর্বহারাদের বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি এবং যারা অনিবন্ধিত শ্রেণী তাদের প্রতি আমার দৃঢ় আলোচনা এবং সমর্থন তাই প্রাকৃতিক এবং মৌলিক ধারণার অর্ন্তভুক্ত।
থমাসঃ- “La Distance Politique” এর মতে L’Organisation politique” এর জন্ম হয়েছিল ১৯৮৩ সালের দিকে এবং এই প্রতিষ্ঠানের ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক লেখাগুলো ছাপানো হতো Le Per- roquet শীর্ষক জার্নালে। ১৯৯২ সাল থীকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত La Distance Politique এ লেখা প্রকাশ করা হতো। সেই সময়কালীন গ্রুপগুলোর এক্টিভিটি ও লেখালেখির চিত্রায়ন আপনার কাছে কেমন ?
বাদিউঃ- পলিটিক্স অর্গানাইজেশনটি খোলামেলাভাবেই মাওইস্ট প্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করতো ,এই প্রতিষ্ঠানটি হলো Union des communistes de France marxiste-léniniste যা ১৯৭০ এর দিকে তৈরি হয়। এই সংগঠনটিই মাও এর সংগঠনকে অনুসরণ করে। এই সংগঠনের আশা ভরসার জায়গা ছিল মাওইজম এবং মার্ক্স-লেনিনিজম যা নিঃসন্দেহে এই সংগঠনকে বেশিই ক্লাসিক্যাল করে তুলেছিল, কিছু গ্রুপের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক নতুনত্বে যথেষ্ট গুরুত্বও দিতে পারেনি। বিশেষ করে সংগঠনের মধ্যে এই ধারণার জন্ম নিলো দ্রুত একটি দল গড়ে তুলতে না পারলে শ্রমিকশ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব হবে না। আমি যতোটুকু সচেতন এই ব্যাপারে,আমার কাছে মনে হলো এই দুই নামের মধ্যে রাজনীতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা তাদের কাছে সম্ভব হয়নি এবং এসব করাও অনিবার্য ছিল না।
থমাসঃ- কেন আপনি ২০০৭ সালে সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে আসলেন?
বাদিউঃ- ২০০৭ সালের দিকে এসে লক্ষ্য করলাম সংগঠনের জাতীয় অর্গানাইজেশন আকারে দাঁড়িয়ে থাকবার যে ঐক্য এবং কেন্দ্রমুখী শক্তি তা আর কেন্দ্রীভূত ছিল না যা সংগঠন হিসেবে টিকিয়ে রাখবে তাকে। ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে সংগঠনের শক্তি ও একশন ধীরে ধীরে সীমাবদ্ধ হয়ে আসছিলোঃ আফ্রিকান অনিবন্ধিত শ্রমিকশ্রেণীদের হোস্টেলের মধ্যেই এটি লক্ষ্যণীয় ছিল । এই সংগঠনটি যে সময়কালে জীবিত ছিল তখন নাম ছিল “The organization of the undocumented workers of the hostels and the political organization.” কিন্তু যেটি “পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন” হিসেবে পরিচিত সেটি আসলে আর কোনো মাইনে রাখে না। এর জন্যে ৪ টি সমাধানের পথ গৃহীত হয়েছিল। প্রথমত, সব হোস্টেলে সংগঠন প্রসারিত করার কথা ছিল, জাতীয় স্কেলে যা যথেষ্ট এক্সটেনশন হতে পারত শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে। দ্বিতীয়টি ছিল হোস্টেলে রাজনৈতিক স্কুল খোলা।তৃতীয়ত, কারখানাগুলোতে সক্রিয়ভাবে গণউৎপাদনের দায়িত্ব নেওয়া । চতুর্থ, এবং আমার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সংগঠন পলিটিক-এর একটি "কাউন্সিল" তৈরি করা এবং শ্রমিক সেনা তৈরি করা যারা তাদের অসাধারণ গুণাবলীর সংগঠক এবং নতুন চিন্তার বাহক হিসেবে নিজেদের প্রদর্শন করেছিল। সকলে একসাথে একটি নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা তৈরি করে সত্যিকার অর্থেই যাযাবর সর্বহারাশ্রেণীর নোঙর চড়াবে ।এই সব প্রচেষ্টার মধ্যে আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি । কিন্তু আমারও স্বীকার করতে হয়েছে ওদের সাফল্যের বিরুদ্ধে, একটা নির্দিষ্ট জড়তা নিয়ে কিছু সন্দেহ ছিল যা আমি কাটিয়ে ওঠার অবস্থায় ছিলাম না। ঘটনাক্রমে, আমার মনে হচ্ছিল যে সংস্থা পলিটিক্স হোস্টেল এবং অনিবন্ধিত শ্রমিকদের নিয়ে একটি বিশেষায়িত সংগঠন হয়ে উঠেছে, সেটি আর এরকম ' রাজনৈতিক ' ছিল না । কারণ, একটি রাজনৈতিক সংগঠন এমন একটি সংগঠন, যারা একেবারে ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে, একযোগে, একাধিক প্রক্রিয়া ধরে রাখতে সক্ষম ।
Comments
Post a Comment