চমস্কির জবানে ভাষা ও মুক্তির প্রসঙ্গ
১
আচ্ছা আচ্ছা! আমি আমার আলোচনা
শুরু করি একটি নির্দিষ্ট টেকনিক্যাল পদ্ধতিকে মাথায় রেখে। ধরুন, যারা ভাষা নিয়ে পড়ালেখা
করেন তারা প্রায়শই একটি সমস্যার মুখোমুখি পড়ে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে তাকে বলা হয়
অভিজ্ঞতার অভাব। এইযে ধরুন কোনো এক যুবক বয়সী ছেলের ম্যাচুরিটির ঘটনা, যেখানে সে ভাষার
মাধ্যমে তার নিজস্ব বলার দক্ষতা দ্বারা প্রকাশ ঘটাতে পারে সে যা বলতে চাইছে বা যা বুঝাতে
চাইছে। ঘটনাটা হলো প্রকাশের এই ঘটনায় “ক্রিয়েটিভিটি” অনেক বেশিই কাজ করে যা একটি নির্দিষ্ট
ইন্টারকোর্সের সৃষ্টি করে সাহিত্যের সাথে।
এখন কোনো এক মানুষ যার মধ্যে
নিহিত রয়েছে উচ্চতর চিন্তা, জটিল ভাবনার মিশ্রণ ও গোছানো বিশাল পরিমাণ ডেটা/তথ্য –
যার মাধ্যমে ভাষাকে শেখা যায়- সেই ভাষার দ্বারা নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করতে সাহায্য
করে। ব্যক্তি নিজেও যখন ভাষা ব্যবহার করে অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন তখন তিনিও ভাষাকে আরো
ডাইরেক্টলি ব্যবহার করতে পারেন অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে।
এখানে একটি বৈজ্ঞানিক সমস্যা
বিদ্যমান। আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্যের ভীড় বনাম আমাদের জানা তথ্যের গুণগতমানের
মধ্যে যে বিস্তর ফারাক তা আমাদের চিন্তাকে অবৈজ্ঞানিক করে তোলে। বিস্তর সমাজের এতো
সকল মানুষের এই চিন্তা যখন শিশুর মধ্যে প্রবেশ করে ভাষার মাধ্যমে (তথ্যের পরিমাণ ও
গুণের অভাবে) তখন সেই ভাষা থেকে উৎপন্ন জ্ঞানের স্বভাব হয় highly articulated and
highly systematic.
আমি উক্ত কারণের উত্তর একটা
নির্দিষ্ট রূপরেখা ধরে দিবো। প্রতিটি মানুষ যখন লিমিটেড তথ্য বা জ্ঞান নিয়ে সমাজে বসবাস
করেন তখন তাদের মধ্যে সব কিছুর একটি “ধারণা” বা এজাম্পশনের জন্ম নেয়। এভাবে সে অন্যান্য
পার্টের সাথে গুড ডিল করে থাকে। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ও তথ্যের পরিমাণে স্বল্পতা ও অতি
ছড়ানো ছিটানো থাকার ফলে ব্যক্তিটির মধ্যে বারে বারে নানারকম পরিবর্তন সাধন হয়।
একজন মানুষ ভাষাকে ভালোভাবে
তখনই বুঝতে সক্ষম যখন ভাষার এপ্রোচটা হয় জ্ঞানের জন্যে। যে শিক্ষার অভিজ্ঞতার মধ্য
দিয়ে পরিষ্কার বর্ণনা ও নির্দিষ্ট বিন্যাসকে কাজে লাগাতে পারে সেই শিক্ষা তাকে শেখায়
তার অস্তিত্ব সম্পর্কে এবং যে ভাষার মাধ্যমে নিজেকে সে এক্সপোজ করছে তার গুণও বোঝা
যায়।
নতুন কোনো সন্তান যখন জন্মগ্রহণ
করে তখন সে মানুষের ভাষা শুনতে পায়। আর সেই ভাষার ধরণ হলো অনেকটা ন্যারো আর এক্সপ্লিসিট,
যা স্বল্প সংখ্যক ভিন্ন বিষয়াদি বা ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি হয় কারণ যে ভাষা বলা
শুরু করে সে আগে থেকেই “Highly Organized” হয়ে তারপর কথা বলে, যার মধ্যে সীমাবদ্ধ পরিকল্পনার
চেতনা বিদ্যমান। খুব মজার বিষয় হলো, সন্তানের সামনে যিনি ভাষা ব্যবহার করছেন সেখানে
যদিও হাইলি অরগানাইজড চিন্তা থাকে পাশাপাশি সেখানে ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞান উৎপাদনের একটি
লক্ষণও দেখা দেয়। এই জ্ঞানগুলি সৃষ্টি হয় অনেক ছড়ানো ছিটানো তথ্যে হতে (সংখ্যায় অল্প)।
এটিই হলো মূলত, শিশুকালে আমাদের সিস্টেম অফ নলেজ যা আমরা পেয়েছি ভাষার ব্যবহারকারীর
কিভাবে ঘটনাটির বিস্তর ব্যাখ্যা করছেন তার উপর। পুরো বিষয়টিই সিস্টেম্যাটিক। এই এই
সিস্টেমকে বলবো সহজাত/স্বাভাবিক ভাষা ও প্রকৃতিজাত জ্ঞান। এরই সাহায্যে একজন মানুষ
যখন কোনো আচরণের প্রকাশ ঘটায় তা তার পূর্বে শেখা প্রকৃতিজাত জ্ঞানের ‘Mental
Representation’ মাত্র।
2
যখন আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়
“ভাষা এবং মুক্তি”
নিয়ে এক সেমিনারে কথা বলার জন্য তখন আমি একটু হতবাক আর আশ্চার্যান্বিত হয়ে পড়ি। আমার
পুরো প্রফেশনাল জীবন আমি শুধুমাত্র ভাষাশিক্ষা এর জন্যে প্রদান করে দিয়েছি। এই ডমেইনের
মধ্যে যেকোনো বিষয়াদি নিয়ে কথা বলা যায়। এমনকি বিংশ শতাব্দীতে তাদের বানানো মুক্তি
এবং স্বাধীনতা যা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও কথা বলা যায়। কিন্তু সেমিনারের
টাইতেলের আসল সমস্যাটা হলো ভাষা এবং মুক্তির মধ্যে সমন্বয়টা নিয়ে। ঠিক কোন পন্থা বা
প্রক্রিয়ায় ভাষার সাথে মুক্তি শব্দদ্বয়ের সাযুজ্য আছে?
তো প্রাথমিকভাবে আমাদের সমসাময়িক ভাষাবিদ্যা ও শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে
যেভাবে আমি দেখি। সেখানে ভাষার বিভিন্ন দিকপ্রক্রিয়া রয়েছে এবং সেগুলো জটিল ও উদ্দীপনামূলক
প্রশ্নের সৃষ্টি করে। কিন্তু এর মধ্যে কম সংখ্যক ভাষা নিয়ে কাজগুলো প্রোডাক্টিভ থিওরিটিক্যাল
কাল কাজ হিসেবে আছে। আমাদের গভীরতর দৃষ্টির জায়গাগুলো হলো বেশিরভাগই “Formal” ব্যাকরণের
দিকে শুধুমাত্র।যে ব্যক্তি ভাষা জানে সে সেইই ভাষার “rules and Principles” গুলো আয়ত্ত্ব
করে নেয়। টেকনিক্যাল টার্মে এটা জেনারেটিভ গ্রামার- যেটি শব্দ এবং অর্থের সাথে সমন্বয়ে
ঘটে। প্রমাণ হিসেবে বেশ ভালো মাপের এবং এনলাইটেন্ড হাইপোথিসিস রয়েছে যা অনেকগুলো ভাষার
ক্ষেত্রেই সত্য। সেখানে নতুন করে একটি থিওরির জন্ম দিয়েছে “Universal Grammar” নামে,যেটি
মূলত বলতে চাচ্ছে এই ভাষাগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ঠ্যসমূহ একজন মানুষ শিখতে পারে স্বাভাবিক
ভাবেই। তার মানে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া আমরা অর্জন করেছি। “The subject” হলো বিশেষভাবে
গুরুত্বপূর্ণ। Universal Grammar শেখার জন্যে সাব্জেক্ট একটি যথাযথ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে
মনের অপরিহার্য বিষয়কে পাঠ করা সম্ভব। তার মানে এটি অত্যন্ত আকর্ষণপূর্ণ আবিষ্কার,
যেটা আমিও বিশ্বাস করি, সেটি হলো Universal Grammar এর আইনগুলো rich,abstract and
restrictive এবং এটি বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ও অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করার উপায় হিসেবে ব্যবহার
করা যায়।
বর্তমান সময়ে এই বোধশক্তি নিয়ে,
যদি ভাষাকে মানুষের অন্যান্য সমস্যার তদন্তের জন্য একটি স্প্রিংবোর্ড হিসেবে প্রদান
করা হয় তাহলে সেটি হবে ভাষার এই বিশেষ দিকগুলোই - যার জন্য আমাদের মনোযোগ ঘোরাতে হবে।
শুধুমাত্র এই দিকগুলো যা যুক্তিসঙ্গতভাবে ভালোভাবে বোঝা যায় । অন্য অর্থে, ভাষার আনুষ্ঠানিক
বৈশিষ্ট্যের অধ্যয়ন মানুষের স্বভাবকে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করে- মনের সেইসব গুণাবলীতে
আমাদের বোঝার সীমা যা মানুষের কাছে গড়ে উঠে দৃশ্যত অনন্য। এই জন্যেই আমাদের কোনো ব্যক্তির
(যেকোনো সংস্কৃতির মানুষ) সাংস্কৃতিক অর্জনের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হবে অন্তরঙ্গ
ভাবে, যদি বেশ অস্পষ্ট পন্থাথেকেও থাকে তবুও । (অর্থাৎ ভালোভাবে মানুষকে রিড করার জন্যে)
ইতিহাসের পাশ্চাত্য চিন্তায় যে উপনীত হয়েছিল এককালে তার কাছে এটি বিশ্বাস করা সম্ভব হতো “স্বাধীনতার যোগসাজশ,সকলের সমষ্টি এবং বস্তুগত দর্শন আমাদের মানব সত্তার সকল সম্পর্কের মধ্যে মুক্তি এনে দিয়েছে এবং এই বিপ্লব বিজ্ঞানকে নতুন করে অরিয়েন্টেশনের শক্তি এনে দিয়েছে ।“ এখানে বিপ্লব শব্দটির বিভিন্ন সংঘ রয়েছে। স্কেলিং যেটাকে বলেছে “man is born to act and not to speculate”(এখানে স্পেকুলেট কথাটার মানে হচ্ছে কোনোধরনের শক্তিশালী বা দৃঢ় সত্যের বাহিরে গিয়ে মানুষকে নিয়ে থিওরি দাড়া করানো যাবে না)। যখন তিনি লিখেছেন “সময় এসেছে দাবী করা উন্নতচরিত্রের মানবতার কাছে ফ্রিডম অফ স্পিরিট নিয়ে এবং আর মুক্তির জন্যে ধৈর্য্য ধরে চোখের পানি ফেলতে হবে না মাম্নব জাতিকে” ঠিক তখনই আমরা একটি শব্দ শুনতে পেলাম , Libertarian চিন্তার এবং বিপ্লবের আশা পেলাম। স্কেলিং তখনই বলেছেন “ সকল দর্শনের শুরু এবং শেষ হলো- স্বাধীনতা”। শব্দটি আসলে ভাবার্থে এবং প্রয়োজনীয়তা সন্নিবেশিত যখন মানুষ অথোরিটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের লেজিটিমেসি কে বাধাপ্রদান করছিলো, সমাজের অথোরিটির চেইন ধ্বংসের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাঠে নেমেছিলো এবং চেয়েছিলো অধিক মানবিক এবং গণতান্ত্রিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে। এটাই স্বাধীনতা। এমন একটি সময় ছিল যখন দার্শনিকগণ মানুষের স্বাধীনতার প্রকৃতি এবং সীমাবধতা নিয়ে তদন্ত করেছিলো সেখানে শিলিং মানুষের মূল প্রকৃতি ও ইগোকে সম্মান জানিয়ে বলেছিলেন “এর(মানুষের প্রকৃতির) নির্যাসই হলো স্বাধীনতা” এবং দর্শনকে যথাযথ সম্মান দিয়ে বলেছিলেন, “দর্শনের মর্যাদা নিহিত মানুষের স্বাধীনতায়। “
“ভ্যানগার্ড” এর চিন্তাগুলো
খুবই সহজ। এই চিন্তাসমূহের মধ্য দিয়ে মানুষ তার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম,যা অনেকটাই
Right Wing Libertarianism () এর ধারণার মতো
। এটি হলো একটি আদর্শিক বিচারালয় যার মধ্য দিয়ে নিজের মূল্যকে সর্বোচ্চ রূপে প্রতিষ্ঠিত
করা হয় এবং বাদ-বাকি বিষয় আশয়কে মূল্যায়ন করা হয় না। আপনি যখন সকলের সামনে দাঁড়িয়ে
কোনো কাজ করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে একত্র হয়েই কাজ করতে হবে। আপনি যদি আসলেও যোগ্য হন
তাহলে নিশ্চিত আপনি চাইবেন না আপনারটা দেখাদেখি বা নকল করে অন্যকেউ একই কাজ করুক। এই
আদেশটা যেমন ছয় বছরের বাচ্চার জন্যে সত্য ঠিক একই ভাবে একজন পোস্ট গ্র্যাডুয়েট শেষ
করা ছাত্রের জন্যও সত্য। আপনাকে একসাথেই মিলেমিশে কাজ করতে হবে কারণ নিজেকে এনলাইটেন্ড
করার জন্যে। যে মানুষ আরেকজনকে শিখাতে সাহায্য করে সে নিজেও শিখে। সেক্ষেত্রে আপনাকে
ব্যবহার করতে হবে আপনার যতোটুকু রিসোর্স, জ্ঞান এবং অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে অন্যকে শেখানোর জন্যে, যে প্রক্রিয়ার মধ্য
দিয়ে আপনিও তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারবেন। এইটাই বুদ্ধিজীবীর কাজ।
এর মানে এই নয় যে সেখানে কোনো
ভ্যানগার্ড থাকবে না। বরং বুদ্ধিজীবী হলো সেই ভৃত্য যারা অন্য মানুষদের নিয়ে একত্রে
কাজ করে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরো তরান্বিত করার লক্ষ্যে। এইটা কোনো হার্ড
সাইন্স না। একজন প্রফেসর ক্লাসের সামনে গিয়ে অনগরল লেকচার দিবেন এবং ছাত্ররা শুধুই
নোট টুকে নিতে ব্যস্ত থাকবে এমনটা না। সমগ্র প্রক্রিয়াটাই হলো “মতামত বিনিময় করা”।
আপনি আপনার কাজ নিয়ে যখন একা দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তখন যদি কোনো ছাত্র আপনার লেকচারে হঠাৎ
দাঁড়িয়ে দাবী করে আপনার কথাটি ভুল এবং এটি অন্যভাবে দেখা সম্ভব এই মতামত প্রদান করে
তাহলে তখনই আপনাকে সেই ব্যাপারে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। তার দেখানো সমস্যাটি নিয়ে
আপনি পুনরায় ভাবুন। ঠিক একই কাজটি শ্রমিক মেহনতিদের সাথে কাজ করার সময়ও লক্ষ্য রাখতে
হবে। তাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং তাদের সমস্যাগুলোকে বোঝা আপনার থেকে একান্ত কাম্য।
একজন শ্রমিকেরও নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্ঞান রয়েছে যেমনটা আপনারও রয়েছে। তারও যেমন জীবনে
অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনারও রয়েছে অভিজ্ঞতা। এখন শুধু প্রয়োজন দুটোর মিশ্রণ এবং মেহনতি মানুষদের
অভিজ্ঞতার সাথে নিজের অভিজ্ঞতার কোয়ালিশন। এই কোয়ালিশন যতোক্ষণ পর্যন্ত মানুষের জন্যে
পরিচালিত থাকবে, ঠিক ততোক্ষণ পর্যন্ত মুক্তি ও স্বাধীনতার ব্যাপারে গণমানুষের একটি
স্রোত লক্ষ্য করা যাবে।
References:
1. Language and Mind (1968)
2. Problems of Knowledge and Freedom (1971)
3. On Language (1998)
Writer:
Hasnain Imtiaz
university of Dhaka
ইন্টারেস্টিং আলোচনা!সুন্দর!💙
ReplyDelete