জটিল রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের উত্থান (১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল)।প্রসঙ্গঃ- আর্জেন্টিনা। (পর্ব-২)


Argentina:Third Cinema
১৯৫০ সালের দিকে আর্জেন্টাইন বিখ্যাত ডকুমেন্টারিস্ট ফার্নান্দো বিরে তৈরি করেছেন জটিল ও বাস্তবধর্মী মুভমেন্ট, যাকে বল হয় তৃতীয় বিশ্বের চলচ্চিত্রের তত্ত্ব অনুসারে, "Cinema of Discovery"। এর আগমণ অনেকটাই ইউরোপের রেনেসাঁর আমলের "Age of Discovery" বলেও ধরে নিতে পারেন। যাই হোক, এই চিন্তা তৎকালীন দক্ষিণ আমেরিকার কাছে অত্যাধিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। বলা যায় এটি হলো ল্যাটিন আমেরিকার নতুন আর্ট সিনেমার মুভমেন্ট। ১৯৬০ সালের আগে আর্জেন্টিনার মতো রাষ্ট্রে সামাজিক আবহাওয়া ও চিন্তার পরিবর্তন সাধিত হলে সেখানে Nueva Ola or New Wave এর প্রাদুর্ভাব লক্ষণীয়, যা বুয়েন্স আয়ার্সের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপকতর পরিচিতি ও আস্থাও লাভ করে,তরুণদের সংখ্যাও দীর্ঘায়িত হয় যারা র‍্যাডিক্যাল চিন্তার বাহিরে চিন্তা করা শুরু করে। এই নিউ ওয়েভ মূলত ফরাসী নব্য তরঙ্গ বা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ নামেই বেশ পরিচিত। এটি বেশ দীর্ঘ আলাপ বলে অন্য সময় বিস্তারিত লিখবো। কিন্তু আর্জেন্টিনা বেশিদিন এই ধারায় টিকে থাকতে পারেনি, ১৯৬০ এর শেষের দিকে এসে আর্জেন্টিনা যে গুরুত্বপূর্ণ মুভমেন্ট শুরু করে তা হলো সংগ্রামপ্রবণ চলচ্চিত্র, যা নিউ ওয়েভের বাস্তবতাকেও পরাজিত করে তুলে নব্য ধারার আবিষ্কারকেরা।

আর্জেন্টাইন জাতীয়তাবাদী নেতা এবং প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনকে নিজের দেশের দলগুলো সহ বাহিরের পরাশক্তির দেশগুলোর ক্ষমতাশীলেরা চেয়েছিলেন তাকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিয়োগ  করে দেবার জন্যে। এর লক্ষ্যে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বেছানো হয়। ১৯৬৬ সালে এরই মধ্যে সংঘটিত হয় মিলিটারী ক্যু, উক্ত মিলিটারী শক্তি শহর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলে সরকারের পতন ঘটে। সরকারের পতনের সাথে সাথে মিলিটারীর কাজগুলো ছিল আর্জেন্টিনার আইনকক্ষ ও সভাকে বাতিল করা,রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যান করা এবং দল্ভিত্তিক রাজনীতিকে প্রাধান্য না দেওয়া, শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়নের বিদ্রোহকে অন্যায়ভাবে দমন করে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা  ইত্যাদি। এমনকি চলচ্চিত্র সংস্কৃতিতে তার দমনমূলক নীতি দ্বারা সেখানে আইন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে চিন্তা ও ভাবনার মাথা কেটে দেওয়া হয়। কমার্শিয়াল ও আর্ট চলচ্চিত্র গুলো সবগুলো চলে যায় মিলিটারীর ইচ্ছার হাতে, এই রেজিমের আগের রেজিমে যখন অনুমোদিত ছিল লোকসংস্কৃতি ও আর্জেন্টিনার ইতিহাস নিয়ে কাজ করার সেখানে মিলিটারীর শাসন এসে তা সব বন্ধ করে দেয় যেন মানুষ ইতিহাসমুখী না হয়ে উঠতে পারে।

এতো সকল চাপের মাঝেও ও শোষণের মধ্যেও আর্জেন্টিনায় তবুও অসংখ্য নায়ক,বিপ্লবী ও অকুতোভয়ী ভারকেন্দ্রের জন্ম নেয়। তাদের জন্ম হয়েছে মিলিটারি রেজিমকে সরাসরি আঙ্গুল দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা। আমার কাছে এই জনরার মানুষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই চলচ্চিত্রকারদের আন্দোলনের ফলেই এবং তাদের সৃষ্টিকৃত মোশন পিকচার সমগ্র আর্জেন্টিনার চেহারাকে বদলে দিয়েছে এবং অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করেছে ও দমন করেছে। তো যা বলছিলাম আরকি,এই সময়কালে মিলিটারী রেজিমের বিপরীতে জন্ম নেয় মধ্যবিত্ত শ্রেণী, ছাত্র-ছাত্রী, বামপন্থী লিডারেরা এবং পেরোনিস্ট (যারা প্রেসিডেন্ট পেরোনের অনুসারী ছিলেন বা যারা জুডিশিয়ালিজমের তন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের বোঝানো হয়।)সহ ছোট বড় অনেক দল।এই সময়কালে ১৯৬৯ সালের দিকে আমরা দেখি প্রথম বিদ্রোহী মনোভাবী রাজনৈতিক চলচ্চিত্র "Operation Massacre(1969)"  । এই চলচ্চিত্রের মূল বৈশিষ্ঠ্য ছিল  তৎকালীন আর্জেন্টিনার মিলিটারী সরকারের সকল কুকীর্তি ও অন্যায়মূলক আচরণকে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা ও সেই সাথে মিলিটারী কিভাবে পেরোনিস্টদের ধরে ধরে হত্যা করছে তার ভয়াবহতাকে প্রকাশ করা। এই চলচ্চিত্রের পরেই সৃষ্টি হলো আর্জেন্টাইন "Cine Liberacion Group" এর প্রবক্তা,আর্টিস্ট, ডিরেক্টর এবং তত্ত্ববিদ যাদের বলা হয় বামপন্থী বা লেফট উইং পেরোনিস্ট ফার্নান্দো সোলানাস এবং অক্টাভিও গেটিনো। এই প্রতিষ্ঠান ১৯৬৯ দিকে হয়ে উঠে আর্জেন্টিনার মিলিটারী শাসকের বিরোধী দলীয় আদর্শ এবং চিন্তা। অর্থাৎ যুদ্ধ এখন শুধু মিলিটারীর অস্ত্র বনাম চলচ্চিত্রের ফ্রেম এর মধ্যে।
Fernando Solanas

Octavio Getino


এরই মধ্যে সোলানাস ও গেটিনোর প্রথম মেজর চলচ্চিত্র ছিল ১৯৬৮ এর শেষের দিকে যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে প্রবল্ভাবে। চলচ্চিত্রটি নাম "The Hour of the Furnaces(1968)"। চার ঘন্টার এই সমগ্র কাজটি পরিচিত হয়ে উঠলো 'ডিরেক্ট সিনেমা' আকারে, ডিরেক্ট সিনেমা তাদের বলা হয় যারা রাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্ত বা আইন যা সকলের জন্য প্রযোজ্য করা হয় সেই আইন বা সিদ্ধান্তকে মূল বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে একটি তূলনামূলক আলোচনায় যাওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, বাস্তবতার প্রেক্ষাপটকে সাক্ষী রেখে তা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তৃতীয়ত, তারা নতুন ফিল্ম ল্যাংগুয়েজে বিশ্বাসী এবং রাষ্ট্রপ্রদত্ত ডকুমেন্টারীর বিরুদ্ধে কারণ তা তার শাসনকে সম্মতি জানাতে বাধ্য করে 'হেজেমনি' সৃষ্টি করে- এর পরিণত রূপ হলো কর্তৃত্ববাদ,প্রয়োগবাদ,অপশাসন,নীতিবিরোধী ও অন্যায়মূলক। উক্ত চলচ্চিত্রটিতে এমন সাউন্ড ট্র্যাক ব্যবহার করা হয় তা যেন সরাসরি দর্শকের সাথে ইমেজের বাস্তব যোগসূত্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়,সাউন্ডের ঘনত্ব অধিক বলে তা গুরুত্বারোপের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সমগ্র চলচ্চিত্রটি হয়ে উঠে সোভিয়েত মন্তাজের আমলে ভের্তভের র‍্যাডিক্যাল বিপ্লবের ন্যায়, তবে আর্জেন্টিনা সেই বিপ্লবকে নতুন করেই সাজিয়েছে। 

চলচ্চিত্রটি গড়ে উঠে তিনটি স্তরে- তিনস্তরের মূলমন্ত্র হলো Argumentation, Action, Analysis। এর মধ্যে প্রথম স্তরে দেখানো হলো "নব্য উপনিবেশবাদ ও জুলুমের ইতিহাস" যেখানে দেখানো হয়েছে আর্জেন্টিনাকে অত্যাচার এবং শোষণ করছে ইউরোপের পুজিবাদী সমাজ,সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও রুলিং এলিট শ্রেণীর নাগরিক(এলিট প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নির্দিষ্ট আইন প্রমিকরণ করে তা শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্তদেরুপর চাপানোর প্রক্রিয়া)।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো- এই প্রথম স্তরকে উৎসর্গ করা হয় চে গুয়েভারার জন্যে যিনি নব্য উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে পলিটিক্যাল ও গেরিলা সংগ্রাম চালিয়েছেন সে জন্যে। দ্বিতীয় স্তরটি ছিল "স্বাধীনতার মূলমন্ত্র" যেখানে দেখানো হয় পেরোনিজমের চিন্তাধারা ও দর্শন যা মুক্তি ও জাতির কথা বলে, আইনের সমতায়নের কথা বলে তাকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং গণমানুষের জাতিস্বার্থকে রক্ষা করা। তৃতীয় স্তরটি হলো "স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আক্রমণ" যেখানে প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন এক্টিভিস্টদের ইন্টারভিউ, যারা আলোচনার দ্বারা ফুটিয়ে তুলেছে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য কোন কোন উপাদান ও উপকরণ প্রয়োজন এবং কিভাবে সমাজের পরিবর্তন সমগ্র রাষ্ট্রের জন্য উপকারী। উল্লেখ্য যে, এখানে এক্টিভিস্টরা ছিলেন সমাজের মধ্যমণি ও ইন্টেলেকচুয়াল, সিভিল সোসাইটির অংশও ছিল। তাদের মূলভাব ছিল ,সামরিক শাসনের প্রভাবে গঠিত রাষ্ট্র ফ্যাসিজম ছাড়া আর কিছুই নয় যা মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রাষ্ট্র তখন হয়ে উঠে কর্তৃত্বের শাসন ও সে ইতিহাস রচনা করে নিজের শাসনের ইতিহাস। এই কয়েকটি লাইন তৎকালীন আর্জেন্টিনার প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। The Hour of the Furnaces চলচ্চিত্রটি এতোই মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠার কারণ তার শব্দ এবং ছবির মধ্যে কোলাজের ফলে। কোলাজের ফলে সৃষ্টি হয় উৎকণ্ঠা ও উর্ধ্বগামী চিন্তা এবং বিপরীত চিন্তার মধ্যে খন্ডন প্রক্রিয়া। এই চলচ্চিত্র তাই "Myth of Universal Culture" কে বয়কট করে, হলিউডের ইন্ডাস্ট্রি থেকে কর্পোরেশনের প্রভাবমূলক আচরণ সকল বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করা হয়। 
মিলিটারী মার্চিং

শহরের দিকে শক্তিপ্রদর্শন


এই চলচ্চিত্র কিছুদিনের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে সকল শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে। এমনকি সিক্রেট মিটিং গুলোতেও এগুলো প্রদর্শন হতো। সোলানাস ও গেটিনো বিশ্বাস করেন,' চলচ্চিত্র হয়ে উঠুক ইন্টারপ্রিটেশনের ন্যায় , যেখানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মূলভাব,ভাবের প্রবাহ, দর্শন ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে একের সাথে অন্যের'। এবং আনন্দের ব্যাপার হলো সোলানাস ও গেটিনো যা বিশ্বাস করেছেন তাই ঘটেছে! দুই বিখ্যাত ডিরেক্টরের ভাষায় তাই - "It is now up to you to draw conclusions,to continue the film.You have the floor."

এরই সাথে "Cine Liberacion Group" নিজস্ব ম্যানিফেস্টো সৃষ্টি করে ফেলেছে এই চলচ্চিত্রের পর, তারা মনে করেন সময় এসেছে তৃতীয় সিনেমাকে সংজ্ঞায়িত করা। এর আহে সোলানাস ও গেটিনো 
'First Cinema' কে সংজ্ঞায়িত করছেন এভাবে- এটি হলিউড চলচ্চিত্র বা ইন্ডাস্ট্রি বেজ চলচ্চিত্র যারা দর্শকের সামনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও মগ্নতার জন্ম দেয়। এভাবেই প্রতিটি দর্শক হয়ে উঠেন একেকটি পণ্য যার জ্ঞানকে কেনা যায় ইন্ডাস্ট্রির দ্বারা এবং তারা যে জ্ঞান ও স্বভাব উৎপাদন করে তা পরিবর্তনের কথা না বলে আধিপত্যকে সম্মান জানানোতে উৎসাহী করে। যাকে আমরা বলি, "Consumer of Bourgeois Ideology" [বিশেষভাবে প্রযোজ্য আইডিওলজি ও স্টেট এপারেটাস এখানে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন আলথুসার এবং থিওডর এডোরনো]। "Second Cinema" উক্ত দুইজন ডিরেক্টরের মতে, যা অটর-কেন্দ্রভিত্তিক আর্ট সিনেমা (Auteur এসেছে ফ্রান্স থেকে) যার মূল ভাব হলো নিজস্বচিন্তাভিত্তিক ও চলচ্চিত্রকার যা বিশ্বাস করেন বা যা দেখেন তাই। এর জন্যে তিনি সমাজের যেকোনো স্তর নিয়ে কাজ করতে পারেন। "Third Cinema" হলো সেটা যা স্বাধীনতার ও মুক্তির হাতিয়ার (সোলানাস ও গেটনোর মতে)। এখানে পরিচালক হয়ে উঠবেন সমগ্রতার একটি অংশমাত্র,তিনিশুধুই প্রোডাকশনের হেড নন, তিনি একই সাথে গণ আন্দোলনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক নেতৃত্বদানকারী। চলচ্চিত্র হয়ে উঠবে শোষণের বিরুদ্ধে  হাতিয়ার, কর্তৃত্বের শাসনের বিপরীতে। 

আর্জেন্টিনায় এবার সৃষ্টি হতে থাকে  The Seven Lunatic (1973),Painted Lips (1974),El Familiar (1972) 
এর মতো সংস্কারবাদী চলচ্চিত্রগুলো। এই সকল চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, সকলকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে বের হয়ে সমাজপন্থী ও রাষ্ট্রপন্থী হয়ে উঠা কেন জরুরি। দ্বিতীয়ত তা সকলেই অর্থোডক্স ন্যারেটিভকে চ্যালেঞ্জ করে। গেটিনোর এল ফ্যামিলিয়ার চলচ্চিত্রটি সিক্রেট গ্রুপগুলোতে ডিস্ট্রিবিউশনের জন্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয় ! যারা পার্টিসেপেন্ট কমরেড তাদের মধ্যে অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠে চলচ্চিত্রটি। গেটিনো বলেছেন তার চলচ্চিত্রটি নিয়ে - "চিন্তা কর তারপর বিতর্ক করো। সমাধানে আসবে।"

Cine Liberacion সর্বদাই তার ভালোবাসা স্থাপন করে গিয়েছে কিউবার প্রতি। কিন্তু পার্থক্য এখানে যে আর্জেন্টিনা যে বিপ্লবী ফর্মেট নিয়ে এগিয়েছিলো তা কিউবান স্টাইলের মতো নয়। আর্জেন্টিনা পপুলার বিপ্লবের ভাষা নিজে সৃষ্টি করে গিয়েছে যার পেছনে নব্য বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটির হাত ছিল প্রখর। 

১৯৭০ সালের দিকে আর্জেন্টিনার সরকার এবার ভয়ঙ্করতম বিদ্রোহ-বিপ্লব ও শ্রেণীর সংগ্রামের মুখোমুখি হলো।সোলানাস ও গেটিনো এরই মাঝে কয়েকটি সিনেম্যাটিক ফর্মুলা নির্ভর ডকুমেন্টারির সৃষ্টি করলেন যেখানে বিভিন্ন শ্রেণীবদ্ধ মানুষদের আশা,ইচ্ছা ও দৃষ্টিকোণকে তুলে ধরলেন। সেই সাথে তুলে ধরলেন সেই প্রেসিডেন্ট পেরনের বিখ্যাত ভাষণ ও বক্তৃতাও। এভাবে সৃষ্টি হয়ে পড়লো আল্ট্রা বিপ্লবী গ্রুপ, লেফট উইং তার কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিলো প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ,সিনেমার অন্যান্য গ্রুপও সৃষ্টি হলো ক্রমান্বয়ে। 

১৯৭৩ সালের দিকে মিলিটারী শাসক পুরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো তাদের বিদ্রোহে, এমনকি নিজের দেশের অর্থনীতিও সামলাতে অজস্র হিমশিম খাচ্ছিলো। ফলে তাদের পতন একেবারেই নিশ্চিত হয়ে পড়লে মিলিটারী শাসক পরাজয় বরণ করে নেয়। তারপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হয় পেরনের। Cine Liberacion গ্রুপ এবার কাজ শুরু করে পেরনের রেজিমের জাতীয়তাবোধ ও ন্যায়নীতির পক্ষে ।সোলানাস হয়ে যান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার এসোসিয়েশনের হেড এবং গেটিনো ন্যাশনাল সেন্সরশীপ বোর্ডের প্রধান। এই দুইজনে মিলে তখন আর্জেন্টিনাইয় মিলিটারী শাসনের সময় যতোগুলো সিনেমা সেন্সরে আটকা পড়ে বাতিল হয়ে যায় সবগুলোকে তারা উন্মুক্ত করে দিলেন সকলের জন্য। রাষ্ট্র কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থায়নে সাহায্য সহযোগিতা করা শুরু করলো সাংস্কৃতিক সকল প্রতিষ্ঠানকে, উদারনীতিতে পদার্পণ হলো রাষ্ট্র। পেরনের রাষ্ট্রের ফর্মুলা খুবই অসাধারণ এবং এন্টি কলোনিয়াল ছিল। কিন্তু ১৯৭৪ এর দিকে পেরনের মৃত্যু যেন আর্জেন্টিনার জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। (পেরন পরবর্তীতে ১৯৮০ সালের দিকে আর্জেন্টিনা নতুন মাত্রায় নতুন আরো তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়ে কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সে আলোচনা অন্য প্রসঙ্গে)

Comments

  1. Online Slots | Casino, Sportsbook and Table Games - Jtm Hub
    JT Rewards Casino. Your casino 창원 출장샵 rewards program allows 보령 출장마사지 you 여수 출장샵 to collect your rewards 당진 출장샵 points 평택 출장안마 to play slots, video poker, and casino games. JT Rewards rewards

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পোস্ট মর্ডানিজম :ভাবনাচিন্তা ও তত্ত্ব

মিশেল ফুকোঃ জ্ঞান,শৃঙ্খলা এবং ক্ষমতা

১৯ শতকে বাংলায় সমাজ সংস্করণ এবং ধর্ম সংস্কার