মানুষ কিভাবে এবং কেন রাজনৈতিক জীব? পর্ব -১ (মস্তিষ্ক টু মস্তিষ্কের জার্নি)

মানুষ কি কোনো অর্থে পলিটিকাল কিংবা রাজনৈতিক জীব? যদি উত্তর না হয় তাহলে মানুষ হয়তো অন্যকিছু। কথা হলো 'অন্যকিছুটা' কি তা যেহেতু মানুষ এখনও আবিষ্কার করতেই পারেনি সেখানে তাকে অরাজনৈতিক হিসেবে ভাবা রিয়ালিস্ট সেন্স থেকে যৌক্তিক নয়। আবার মানুষের ডিনায়াল এক্টকেও তো খারিজ করা সম্ভব না, কারণ সে কনশাস মাইন্ডেই সেই ডিনাই টা করছে। আর ডিনাই টা ভুল হলেও, সে তো ভুলের অস্তিত্বকে নিজে নিজেই খারিজ করে দিচ্ছে তাতে সমস্যাটি কোথায়? সমস্যা নেই , যদি সেটাকে বিবেচনা করা হয় তার নিজস্ব স্বার্থ সে হাসিল করতে পারলো কিনা। ইন্ডিভিজুয়াল চয়েজ তাহলে কেন গুরুত্বপূর্ণ? কোন অর্থে? 

চয়েজের গুরুত্ব দিয়ে আমি আলোচনাটি একটু বিস্তার লাভ করাতে চাই এই কারণ এর একটি ভ্যালিড মূল্য সমাজে ছড়ানো। আমি এখানে লেখাকে ক্রিটিকাল মেথড আকারে দেখছি তবে আমি চেষ্টা করবো সহজ ভাষায় মানুষের নিউরন সিস্টেম কতোটুকু জটিল এবং "চয়েজ" শব্দটি কিভাবে রাজত্ব বিস্তার করেছে, যা মানুষের আল্টিমেট 'ইউনিভার্সেল ট্রুথ' হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তার করছে যার ফলাফল আজকের সামাজিক সম্পর্ক।  

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন ক্রুসেড সম্পর্কে। আমি ক্রুসেড সম্পর্কে এতো ডিটেইলসে যাবো না এই অর্থে কারণ এটি যে প্রকৃতার্থেই ধর্মযুদ্ধ তাতে সন্দেহ নেই - খ্রিস্টানদের স্বপ্ন ছিল জেরুজালেম দখল করে ও বাইজেন্টাইনে আক্রমণ করে মুসলমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটাবে। অনেক ইতিহাসবিদ বলে থাকেন, ক্রুসেড পূর্ববর্তী সময়কালে রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা যে স্টাইলে চলতো তাতে ক্রুসেডের দরকার ছিল না। খ্রিস্টানদের মধ্যে পোপ আর্বান- ২ তখন মধ্য ফ্রান্সে বসে চিঠিতে লিখেছিলেন সময় কি এসেছে খ্রিস্টানদের পবিত্র শহর দখল করার জন্যে? তিনি মনে করেন, খ্রিস্টানদের জন্যে পবিত্র হবে যুদ্ধ করা এবং তারাই স্বর্গবাসী হবে। সেন্ট অগাস্টিনের নাম বলে থাকেন কারণ তিনি প্রথম বলেছেন 'এ কেমন যুদ্ধ!' এতোই আগ্রেসিভ ছিলেন যে তিনি বলেছিলেন এগুলো আরবী অর্থে মুনাফিকির কাজ। জাস্ট ওয়ার হলেও তিনি মানতেন কারণ এখানে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি তো ছিলোই, রোমান সাম্রাজ্যও ছিল, হঠাত করে এমন তৃতীয় গ্রুপ উঠে আসার কারণ কি! 

তৃতীয়, চতুর্থ করতে করতে এরকম এক হাজার বছর পার হয়ে যাবার পর ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে এক অদ্ভূত জগতে। পুরোপুরি ভিন্ন একটি জগতে। যেখানে রাস্তায় একটা মানুষ পড়ে থাকলেও 'কেয়ার' না করে চলতে হয়। এই পৃথিবীতেও যুদ্ধের অভাব নেই, ক্রুসেডেও ছিল না। কিন্তু, মানুষ যে ভাবা শিখছে এইটার ফলে পৃথিবীতে প্রকৃত অর্থে দুটি বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে। Pain and Pleasure, Good and Evil. আপনি যদি ইতিহাসকে সত্য বলে মেনে নেন তাহলে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে ইতিহাসের আলোচনায় যেন বস্তুর সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বোঝাটা। 'বস্তুর সাথে বস্তুর সম্পর্ক' এই আলোচনার বাহিরে এর কারণ হলো, এটি ভাবলে হয়তো আমরা মৌলিক সারসত্তা থেকে হারিয়ে যাবো, যেখান থেকে হারিয়ে গেলে আমি এক 'অজানা ভুবনে' প্রবেশ করবো যার কোনো জ্ঞান মনে হয় না মানুষের অনুকূলে পৌছাতে সক্ষম হয়েছে। তাই চোখ আর অনুধাবন বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মানুষের চেতনার গভীর স্তরে 


চয়েজের আলোচনা এখানে গুরুত্বপূর্ণ তাই। চয়েজ বলতে আসলে এটাকে 'কন্ট্রোল্ড চয়েজ' বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবো কেননা আমাদের হাতে ইচ্ছা, অধিকার, কোনো কিছু পাবার বাসনার লিমিট যে নেই তা বুঝতে দেয় না। পৃথিবীর বাস্তবতায় যদি এখন গভীরভাবে ভেবে দেখেন তাহলে আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আপনি যাবতীয় যা যা ব্যবহার করছেন সবকিছুর মধ্যে ন্যূনতম ইনফ্লুয়েন্স আছে যার কারণে আপনি র‍্যাশনালি/যৌক্তিকভাবে কোনো প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে উদার হওয়ার লাভ হলো, এটি আপনার ইচ্ছাকে হার্ম করে না। কিন্তু ইচ্ছাকে যখন আদর্শ হিসেবে Commonality  এর অপরচুনিটি সৃষ্টি করা হয়/ অব্জেক্টিভ সোসাইটিকে যেকোনো একদল মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রবিশেষে প্রাধান্য দেওয়া হয় তখনই অপরপক্ষের সর্বদা একটি অবলিগেশন সেখানে বিরাজ করে। মানে হলো, দুটি কনশাস মাইন্ডের মধ্যে যুদ্ধ কিংবা সংঘাত কিংবা দ্বন্দ। দ্বান্দিকতার সূত্রে পদার্পন করলে আমি কখনই কার্ল মার্ক্সের সূত্রকে ফেলে দিতে পারি না।

তিনি বলছেন বিশ্ব প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ও গতিশীল, প্রতিনিয়ত নতুন বস্তুর আবির্ভাব ও বিকাশ ঘটছে তাই কোনো ঘটনাকে সমাজ বিচ্ছিন্নভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এখানে আমি ক্রিটিকাল মেথডের লেন্স ব্যবহার করে জিজ্ঞাসা করতে চাই, তাহলে অন্যের অধিকার লাভ করার ফলে অপর আরেক দলের মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি - এটিও সমাজে থাকা যৌক্তিক। উত্তর হচ্ছে হ্যা এবং এর পেছনের কারণ হলো জেরেমি বেন্থামের দেওয়া বক্তব্য, মানুষ ইনহেরেন্টলি ব্রুটাল হয়ে পড়বে যদি কেউ না ঠেকিয়ে রাখে। এই কারণে তিনি সহ স্টুয়ার্ট মিল সাহেবও বলেছেন 'উই নিড আ সিস্টেম'। সিস্টেম না থাকলে চেক এন্ড ব্যালেন্স, গুড এন্ড এভিলের মধ্যে ব্যালেন্স, পেইন এন্ড প্লেজারের মধ্যে ব্যালেন্স। 



তার মানে দাঁড়ায়, কমনালিটি রক্ষার জন্যে মানুষের ব্রুটালিটিকে ঠেকিয়ে মানুষের অস্তিত্বের রক্ষা নিশ্চিত করে কম- বেশি, উপর নিচ নির্ধারণ করাটা যৌক্তিক হয়ে গিয়েছে, একুশ সালে এসে এই যৌক্তিকতার পূর্ণ সমর্থন দেয় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ। কারণ এখন আইন আছে, গাইডলাইন আছে, নেশন আছে, সিটিজেনশিপ আছে, ইকোনমি সিস্টেম আছে, কৌশল জব্দ করার বুদ্ধি আছে, পার্সোনাল কমিউনিকেশনের পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে। অর্থাৎ তার গোটা জীবনের সেই হিউম্যান কাইন্ড পৃথিবীতে টপকিয়ে আসার পর থেকেই মানুষ সমাজ গঠন করেছে। তাই সমাজ এই আলোচনায় বাস্তবতা কেননা এটা মানুষের সৃষ্টি। আবার এটিও সত্য যে, সেখানে বার্গেইনিং চিপ না থাকলে সমাজ টিকিয়ে রাখাও সম্ভব না। আধুনিক যুগে এই বার্গেইনিং চিপ হলো টাকা। গণমানুষের জীবনে যেখানে মূল্যবোধ হওয়া দরকার ছিলো যেখানে সবাই একসাথে, হাসিখুশি, কারো কোনো টেনশন নাই সেটা ভাবাটাই আসলে বৃথা এবং সাইকেডেলিক সিদ্ধান্ত হবে।


তবে এর রূপ কেমন কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ কি সেগুলো বেশ ডিটেইল্ড আলোচনা। এখন তাই একটু বলতে চাই 'মানুষ কেন রাজনৈতিক?' এবং এটিকে রিয়ালিস্ট হিসেবে ভাবার ভিত্তি কি যেখানে মানুষ নিজেই ইগনোর করছে 'সে কোনো রাজনৈতিক প্রাণী' নয়?


Comments

Popular posts from this blog

পোস্ট মর্ডানিজম :ভাবনাচিন্তা ও তত্ত্ব

মিশেল ফুকোঃ জ্ঞান,শৃঙ্খলা এবং ক্ষমতা

১৯ শতকে বাংলায় সমাজ সংস্করণ এবং ধর্ম সংস্কার